এনজাইমঃ জীবদেহে অনন্য অণুঘটক হচ্ছে এনজাইম বা উৎসেচক। এদের সবগুলোই প্রোটিন জাতীয়। এনজাইম নিজেরা সরাসরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ না করে কোষীয় বিক্রিয়ার হার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটিয়ে বিক্রিয়ার সাম্যতা সৃষ্টি করতে সহায়তা করে । বিক্রিয়া শেষে অপরিবর্তিত ভাবে মুক্ত হয়ে যায়। Enzyme শব্দটির উদ্ভব হয়েছে গ্রিক en = in, zyme = yeast থেকে। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মান শারীরতত্ত্ববিদ Kuhne সর্বপ্রথম enzyme শব্দটি ব্যবহার করেন। জার্মান বিজ্ঞানী Edward Buchner ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে চিনির ফারমেনটেশন ঘটানোর জন্য দায়ী যৌগটিকে zymasc এনজাইম হসেবে শনাক্ত করেন। এজন্য তাঁকে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে James B. Sumner নামক একজন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম উদ্ভিদকোষ থেকে urease নামক একটি এনজাইমকে স্ফটিকাকারে পৃথক রতে সক্ষম হন এবং বলেন এনজাইমগুলো প্রোটিন। পরবর্তীতে আরও এনজাইম পৃথক করা হয় এবং সর্বজনভাবে কৃত হয়-এনজাইম হলো প্রোটিন জাতীয় পদার্থ ।সজীব কোষে বিদ্যমান যে প্রোটিন জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়ার হারকে নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু বিক্রিয়া শেষে অপরিবর্তিত থাকে তাকে এনজাইম বা উৎসেচক বলে। এনজাইমকে জৈব অণুঘটক-ও বলা হয়।
এনজাইমের ভৌত বৈশিষ্ট্য/ধর্ম (Properties of Enzyme): এনজাইমের বৈশিষ্ট্য হলো-
* প্রধানত প্রোটিন দ্বারা তৈরী এবং কোষে সাধারণত কোলয়েড (colloid) রূপে থাকে।
* কার্যকর হওয়ার পূর্বে এদের পানি প্রয়োজন হয়। - এরা জীবিত কোষেই তৈরি হয়।
* এনজাইম রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করে কিন্তু নিজে পরিবর্তিত হয় না।
* প্রতিটি এনজাইম নির্দিষ্ট সাবস্ট্রেটের উপর ক্রিয়া করে এবং তাঁদের নির্দিষ্ট পরিবর্তন ঘটায়। যেমন- লাইপেজ চর্বিকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়।
* প্রায় সকল এনজাইম পানিতে দ্রবণীয় তবে লিপোপ্রোটিন দ্বারা তৈরী এনজাইমগুলো পানিতে দ্রবণীয় নয়। এরা অ্যালকোহলে (১০০%) অদ্রবণীয়।*এনজাইমের সক্রিয়তা একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত ২৫-৪০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এনজাইমের ক্রিয়া সবচেয়ে ভাল। বেশি তাপমাত্রায় এনজাইম নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু কম তাপে নষ্ট হয় না, তবে তার কার্যকারিতা কমে যায় অথবা বন্ধ হয়ে যায়।
*একটি নির্দিষ্ট এনজাইম একটি নির্দিষ্ট pH (হাইড্রোজেন আয়ন) সীমায় সর্বাধিক সক্রিয়। উদাহরণস্বরূপ, পেপসিন ২ pH মাত্রায় এবং ট্রিপসিন ৮.২ pH মাত্রায় সবচেয়ে সক্রিয় ।
*এনজাইম স্বল্প পরিমাণে খুব সক্রিয়। উদাহরণ, এক অণু ক্যাটালেজ এনজাইম প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড অণুকে ভেঙ্গে পানি ও হাইড্রোজেনে পরিবর্তন করতে পারে।
এনজাইমের রাসায়নিক প্রকৃতিঃ
*এনজাইম প্রোটিন হওয়ায় এরা কোলয়েডধর্মী
*এনজাইম অণু প্রোটিন অণুর মতো বৃহদাকার এবং প্রোটিনের মতো আণবিক ওজনসম্পন্ন।
* কিছু সংখ্যক স্নেহ বিশ্লেষণকারী এনজাইম ছাড়া সব এনজাইমই পানি, অ্যালকোহল ও গ্লিসারলে দ্রবণীয়।
*সব এনজাইমই প্রোটিন, তাই প্রোটিন গঠনকারী অ্যামিনো এসিডই এনজাইমের মূল গাঠনিক উপাদান।
*এনজাইমের সাথে প্রোটিন নয় এমন একটি অংশ যুক্ত থাকতে পারে। সংযুক্ত অংশটি। প্রোটিনের সাথে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকলে তাকে প্রস্থেটিক গ্রুপ এবং শিথিলভাবে আবদ্ধ থাকলে তাকে কো-এনজাইম বলে।
আরও দেখুন...